স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা, কাদেরিয়া ও চিশ্তিয়া তরিকার পীর মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী(র.)এর বানী
(সূত্রঃ সন্তোষ থেকে প্রকাশিত সৈয়দ ইরফানুল বারী সংকলিত “মওলানা ভাসানী বলেছেন” ও “রবুবিয়াত – মওলানা ভাসানীর শেষ কথা” এবং মওলানা ভাসানী (রো.) রচিত “ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় – দর্শন ও কাঠামো” গ্রন্থত্রয় থেকে সংকলিত)
“নেতৃবৃন্দকে কখনো জিন্দাবাদ দেওয়া উচিত নয়। ইহাতে তাহাদের মাথা খারাপ হইবার সম্ভাবনা থাকে।”
“শিক্ষিত উচ্চপদস্ত শ্রেনীটি আজ নিজেদের জন্য ভিন্ন জীবন মান সৃষ্টি করিয়া লইয়াছে এবং সেই জীবনমান বজায় রাখিবার জন্য দেশের মানুষকে তাহাদের স্বার্থের যুপকাষ্ঠে বলি দিয়াছে।”
“বিশ্ববিদ্যালয়ের যেসব ব্যক্তি আজ দেশ চালাইতেছে তাহাদের অনেকেই দুর্নীতি, ঘুষ, সুদ, জুয়া ও মদের বন্যায় ভাসিয়া চলিয়াছে। নিজের সংকীর্ণ স্বার্থের কাছে দেশকে, দেশের মানুষকে বিকাইয়া দিতে কুন্ঠিত হইতেছেনা। এই শিক্ষা মনুষ্যত্ববোধকে জাগ্রত করেনা, বরং মানুষকে আত্ম ও স্বার্থ-সর্বস্ব করিয়া তোলে।”
“বর্তমান শিক্ষায় উচ্চ শিক্ষিত ব্যক্তিরা লক্ষ কোটি ভুখা নাংগা মানুষের ঝুপড়ির পাশে সুরম্য প্রাসাদের বিলাসিতায় গা ঢালিয়া দিতে মোটেই লজ্জা বোধ করেনা। এই সব লোকেরা শাসন যন্ত্রের বিভিন্ন ঘাঁটি দখল করিয়া ধণিক বণিকদের সংগে যোগসাজশ করিয়া সকল প্রকার অর্থনৈতিক সুবিধা লুটিতেছে; আর যাহারা চাকুরী পাইতেছেনা তাহারা নিজেদের জীবন ব্যার্থ মনে করিতেছে। উভয় দলই ধর্ম ও নৈতিকতা জলাঞ্জলী দিয়া ব্যক্তিগত মুনাফাকে শিক্ষার উদ্দেশ্য করিয়াছে।”
“আমি উপলব্ধি করিতে পারিয়াছি, যত সরকারই বদল করিনা কেন, কোন ফলোদয় হইবেনা যদিনা শাসকবর্গ চরিত্রবান হয়। শাসক চরিত্রবান হইলে গোটা সমাজই কল্যাণময় পুত-পবিত্র পরিবেশের দিকে ধাবিত হয়। আর চরিত্রবান লোকেরাই কেবল আল্লাহর রাজত্ব কায়েম করিতে পারে।”
“(বাংলাদেশ স্বাধীণ হওয়ার পর) তোষামোদপ্রিয় মুজিব দুর্নীতিপরায়ণ মোসাহেবদের দ্বারা পরিবেষ্টিত হইয়া ক্রমেই জনগন হইতে বিচ্ছিন্ন হইয়া পড়িলেন এবং তাঁহার সমস্ত সংগ্রামী চেতনা ও ঐতিহ্য ভুলিয়া আত্মরক্ষার চোরাপথ গ্রহন করিয়া নিজেকে ক্ষমতার বেড়াজালে আবদ্ধ করিয়া ফেলিলেন।... বাংলার মানুষের গলায় স্বৈরাচারের অক্টোপাশ পরাইবার সকল ষড়যন্ত্র মুজিব ও তাহার অনুচর ও সুহৃদরা করিতে লাগিল। ‘তাহারা চক্রান্ত করিয়াছিল, আল্লাহও চক্রান্ত করিয়াছিলেন; আল্লাহ চক্রান্তকারীদের শ্রেষ্ঠ’-আল-ক্বোরান।”
“এই সেদিন যে জাতি সাম্য ও স্বাধীণতার সংগ্রামে চরম আত্মত্যাগের পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন করিয়াছে, সে জাতি কি করিয়া মাত্র তিন বছরের মধ্যে খুন, রাহাজানি, রিলিফচুরী প্রভৃতি সর্ব্বপ্রকার দুর্ণীতির আবর্তে হাবুডুবু খাইতে লাগিল। ইহার একমাত্র উত্তর, ক্ষমতালিপ্সু, দুর্ণীতিপরায়ন, দেশাত্মবোধ-বর্জিত রাজনৈতিক নেতৃত্বই এই সর্বগ্রাসী অধঃপতনের জন্য দায়ী। আরবীতে একটি প্রবাদ আছে, ‘আন্নাসু আলা দ্বীনে মুলুকিহিম’ অর্থাৎ জনগন তাহাদের শাসনকর্তাদের আচার আচরণ অনুসরণ করিয়া থাকে।”
“সবার লক্ষ্য যদি স্রষ্টা হয়, সকল সমস্যার সমাধাণকল্পে যদি স্রষ্টার নিয়ম প্রবর্তিত হয়, তাহা হইলে অশান্তি ও হিংসার লেলিহান যুদ্ধবিগ্রহ দূর হইয়া সকল আদম সন্তান ভ্রাতৃত্বের সমাজ গড়িয়া তুলিতে সক্ষম হইবে।”
“খাইয়া পরিয়া স্বাস্থ্য ভাল হইতে পারে, কিন্তু আধ্যাত্মিক উন্নতি ব্যতীত চরিত্র গঠন হইবেনা। মনে রাখিও, সাময়িক ভাবোম্মাদনায় যে উন্নত চরিথ ফুটিয়া উঠে তাহা জোয়ার ভাটা মাত্র।”
“ইসলামের দৃষ্টিতে আত্মিক উন্নতি ছাড়া বৈষয়িক উন্নতি মানুষকে অন্ধ করিয়া ফেলে, আবার বৈষয়িক উন্নতি বাদ দিয়া আত্মিক উন্নতি মানুষের জীবনকে করিয়া তোলে অবাস্তব ও অসামাজিক।”
“আল্লাহ ছাড়া কোন উপাস্য নাই, সুতরাং সব কিছুর উপর সার্বভৌমত্ব রহিয়াছে একমাত্র আল্লাহর। মানুষে মানুষে ভেদাভেদ দূর করিয়া ভ্রাতৃত্বর সুদৃঢ় বন্ধনে আবদ্ধ করিয়াছিল কালেমার শাশ্বত বাণী।”