Powered By Blogger

Monday, April 25, 2011

সরকারের কোরআনবিরোধী নারীনীতিসহ ২০ দফা ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ডের প্রাথমিক শ্বেতপত্র প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন


http://www.amardeshonline.com/pages/details/2011/04/26/78655

ক্ষমতা ছাড়ার আহ্বান খেলাফত আন্দোলনের : সরকারের ইসলাম বিরোধী কর্মকাণ্ডের শ্বেতপত্র প্রকাশ

স্টাফ রিপোর্টার
 
 ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের কোরআনবিরোধী নারীনীতিসহ ২০ দফা ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ডের প্রাথমিক শ্বেতপত্র প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন। গতকাল রাজধানীর একটি রেস্টুরেন্টে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ শ্বেতপত্র প্রকাশ করা হয়। এ সময় দলের নেতারা বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকার কোরআন-সুন্নাহবিরোধী কোনো আইন কখনও করবে না। তিনি নির্বাচনী ইশতেহারেও বলেছিলেন ক্ষমতায় গেলে তার সরকার কোরআনবিরোধী কোনো আইন পাস করবে না। কিন্তু ক্ষমতায় বসে বর্তমান সরকার শুধু নারীনীতিই নয় বরং একের পর এক কোরআন-সুন্নাহবিরোধী কার্যকলাপের জন্ম ও প্রশ্রয় দিচ্ছে। তারা বলেন, সরকার ভালোভাবে দেশ চালালে যতদিন জনগণ চায় চালাক। কিন্তু ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ড করলে তা সহ্য করা হবে না। কোরআনবিরোধীদের সঙ্গে আমাদের কোনো আপস নেই। শান্তিপূর্ণভাবে দেশ চালাতে ব্যর্থ হলে প্রয়োজনে এখনই ক্ষমতা ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান নেতারা।

শ্বেতপত্রে বলা হয়, মহান আল্লাহতায়ালা ওহির মাধ্যমে যে নারীনীতি দিয়েছেন, নারীদের কল্যাণে তাই যথেষ্ট। কিন্তু সরকার এই নীতি বাদ দিয়ে জাতিসংঘে গৃহীত সিডো অনুসরণ করে তৈরি নতুন নারীনীতি বাস্তবায়নে মরিয়া হয়ে উঠেছে। আল্লাহর দেয়া নীতি বাদ দিয়ে এই নীতি করাই কোরআনবিরোধী। তাছাড়া সব ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের সমঅধিকার কথাটাও বেহুদা। নারীনীতির কোরআন-সুন্নাহর সঙ্গে সাংঘর্ষিক ধারাগুলোর ব্যাপারে দেশের আলেমরা বিভিন্ন সভা-সমাবেশ ও মিডিয়ার মাধ্যমে প্রচার করলেও সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে এতে ইসলামবিরোধী কিছু নেই। এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

নারীনীতি ছাড়াও সরকারের অনৈসলামিক কর্মকাণ্ড প্রসঙ্গে বলা হয়—রাষ্ট্রপতি ফতোয়া বন্ধ করার যে ইচ্ছা ব্যক্ত করেছেন তা কোরআনের সুরা নিসার ১৭৬ নম্বর আয়াতের বিরোধী। রাসূল (সা.)-এর জন্ম নিয়ে কটূক্তিকারীর বিচার না করা হাদিসবিরোধী। পবিত্র কোরআনের বিশুদ্ধতা চ্যালেঞ্জ করে আদালতে রিট আবেদন সুরা বাকারার ২ নম্বর আয়াতের বিরোধী। পবিত্র হাজরে আসওয়াদকে শিবলিঙ্গের সঙ্গে তুলনার পরও সরকারের নীরবতা কোরআনবিরোধী। সংবিধানে কোরআনবিরোধী বিভিন্ন বিষয় সংযুক্তি, ভারতের মতো ধর্মনিরপেক্ষতা প্রতিষ্ঠার জন্য উঠেপড়ে লাগা, ফরজ বিধান হিজাববিরোধী রায় ও পরিপত্র জারি, অনৈসলামিক কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ডিজি সামীম মোহাম্মদ আফজালকে বহাল রাখা, আলেম-ওলামা ও কওমি মাদ্রাসার বিরুদ্ধে জঙ্গিবাদের অপপ্রচার, ইসলামবিরোধী জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন সরকারের কোরআন-হাদিসবিরোধী কর্মকাণ্ডের মধ্যে উল্লেখযোগ্য।

খেলাফত আন্দোলন নেতারা বলেন, সরকার নিজের ভুল না বুঝে উল্টো আন্দোলনকারী হাফেজ, আলেমদের হত্যা, মিথ্যাবাদী বলা, গ্রেফতার, হয়রানি ও গুম করছে কার স্বার্থে দেশবাসী তা জানতে চায়। মুফতি আমিনী হাফেজ্জি হুজুরের এতিম সন্তানদের সম্পদ আত্মসাত্ করেছে বলে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য সম্পূর্ণ অসত্য, মিথ্যা ও বানোয়াট। হাফেজ্জি হুজুরের খান্দানের কিছু হলে সরকারের পতন অনিবার্য বলে উল্লেখ করে নেতারা বলেন, সরকার সাংবিধানিকভাবে বৈধ হরতালে বাধা দিয়ে অন্যায় ও অপরাধ করেছে। নারীনীতি নিয়ে তারা যে ফাসাদ সৃষ্টি করছে তাতে বিদেশি এজেন্ডা বাস্তবায়নের চক্রান্তই প্রকাশ পাচ্ছে—যা কোরআনবিরোধী। সরকার রিমান্ডের নামে অমানবিক নির্যাতন, বিনা বিচারে উলঙ্গ করে পুরুষাঙ্গে ইলেকট্রিক শক দেয়া সম্পূর্ণ হারাম ও কোরআন-হাদিসবিরোধী।

২০ দফা ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ডের বাইরেও ধর্মীয়, রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ক্ষেত্রে বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি এবং জুলুমের বর্ণনা দেয়া হয় শ্বেতপত্রে। এ প্রসঙ্গে বলা হয়, এ সরকারের সময় কোরআন তিলাওয়াতের পরিবর্তে রবীন্দ্রসঙ্গীত দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু, আল্লাহর ক্ষমতা নিয়ে সিইসি’র কুফরি মন্তব্য, আজান সম্পর্কে বাজে মন্তব্য, মাদ্রাসা ছাত্রের হাত কেটে নেয়া, স্কুলের সাইনবোর্ড থেকে কোরআনের আয়াত তুলে ফেলা, রাবিতে পায়জামা-পাঞ্জাবি, টুপি-দাড়ি ও হিজাবের ওপর আপত্তি করা, ইডেন কলেজে ছাত্রী পাচারের ঘৃণ্য কাজসহ সারাদেশে খুন, ধর্ষণ, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি ও দলপ্রীতিতে ইনসাফ ও মানবতা ভূলুণ্ঠিত হচ্ছে। এসব কাজ ইসলামবিরোধী। তারা অবিলম্বে নারীনীতিসহ ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ড বাতিল, গ্রেফতারকৃতদের মুক্তি ও মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে সরকারকে বলেন, হঠকারিতা ছেড়ে শান্তিতে ক্ষমতায় থাকুন। নতুবা ভয়াবহ পরিণতি দেখবেন। তখন হা-হুতাশ করেও লাভ হবে না বলে সতর্ক করেন নেতারা।

সংবাদ সম্মেলনে শ্বেতপত্র পাঠ করেন খেলাফত আন্দোলনের মহাসচিব মাওলানা জাফরুল্লাহ খান। এ সময় দলের আমির শাহ আহমদুল্লাহ আশরাফ, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা সাজিদুর রহমান ফয়েজি, ঢাকা মহানগর সভাপতি মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী, মাওলানা ফখরুল ইসলাম, মাওলানা সুলতান মুহিউদ্দিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।