ঢাকা, ২৯শে নভেম্বর ২০১৩ শুক্রবার ॥
আজ শুক্রবার সকাল ৯ টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে খেলাফত আন্দোলনের ৩৩ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে অনুষ্ঠিত ইসলামী চেতনা বিকাশে, ইতিহাস, ঐতিহ্যে খেলাফত আন্দোলনের ৩৩ বছর শীর্ষক আলোচনা সভায়
প্রধান অতিথির ভাষণে
বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের আমীর ও হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর মাওলানা শাহ আহমাদুল্লাহ আশরাফ বলেছেন, ঈমান ও দেশপ্রেম হচ্ছে একটি জাতির
ভিত্তিমূল। ঈমান ও দেশপ্রেম না থাকলে
জাতি অরক্ষিত হয়ে পড়ে। এ জন্যে
হযরত হাফেজ্জী হুজুর রহ., ব্যক্তি, সমাজ, দেশ ও জাতিকে ঈমান
ও দেশপ্রেমের বিশ্বাসে সুপ্রতিষ্ঠিত করার
অঙ্গীকার নিয়ে তওবা
ও জিকরুল্লাহর এক নতুন ধারার রাজনীতির সূচনা করেন। এ লক্ষে তিনি ১৯৮১
সালের ২৯ নভেম্বর বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন প্রতিষ্ঠা করেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের বর্তমান হবু চন্দ্র রাজার গবুচন্দ্র মন্ত্রীদের ও মহাজোট সরকারের চরম খামখেয়ালীতে সংবিধানের কুখ্যাত পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সর্বশক্তিমান আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা
ও বিশ্বাস তুলে
দিয়ে সৃষ্টিকর্তা মহামহিম আল্লাহ পাকের হক নষ্ট
এবং তত্ত্বাবধায়ক পদ্ধতি বাতিল করে আল্লাহর বান্দা দেশবাসী জনগণের ভোটের হক নষ্ট
করার ষড়যন্ত্র করছে। এ কারণে গোটা দেশে
হরতাল, হাঙ্গামা, জ্বালাও-পোড়াও,
সহিংসতার নৈরাজ্য ভয়াবহ
পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। এ অবস্থা চলতে
থাকলে দেশ অচিরেই লেবানন, সিরিয়া, ইরাকের মতো ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হবে।
খেলাফত আন্দোলন ঢাকা মহানগরীর আমীর মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বিশেষ
অতিথি ছিলেন হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর ও ঢাকা
মহানগরীর আহবায়ক আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী। বক্তব্য রাখেন খেলাফত আন্দোলনের মহাসচিব মাওলানা মুহাম্মাদ জাফরুল্লাহ খান , খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আব্দুল কাদের,
খেলাফত আন্দোলনের নায়েবে আমীর মাওলানা হাফেজ
কারী আতাউল্লাহ, আলহাজ্ব আনিসুর রহমান জিন্নাহ, হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা
মহানগরীর সদস্য সচিব
মাওলানা জুনায়েদ আল হাবীব, ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল হান্নান আল হাদী,
আলহাজ্ব আব্দুল মালেক
চৌধুরী, মাওলানা সাখাওয়াত হোসাইন, মুহাম্মাদ আজম খান, মাওলানা সাজেদুর রহমান ফয়েজী, মাওলানা ফখরুল ইসলাম, হাফেজ
মাওলানা আবু তাহের,
এডভোকেট মুহাম্মাদ লিটন চৌধুরী, মাওলানা মাহবুবুর রহমান, মুফতী আব্দুর রহীম কাসেমী, হাজী
জালালউদ্দিন বকুল, হাফেজ
ইবরাহীম বিন আলী,
মাওলানা ফজলুল করিম
প্রমুখ।
মাওলানা আশরাফ আরো বলেন,
বর্তমান মহাজোট সরকার
মহা দুর্নীতিবাজ ও জুলুমবাজ। এই সরকার
পদ্মা সেতু, শেয়ার
বাজার, ডেসটিনি, কুইক
রেন্টাল, হলমার্কসহ বিভিন্ন মহা দুর্নীতি-কেলেঙ্কারীতে বিশ্ব দুর্নীতিবাজ হিসেবে আন্তর্জাতিক খেতাবপ্রাপ্ত মাফিয়াচক্র বলে প্রমাণিত হয়েছে। এই সরকারের নিয়ন্ত্রণে নির্বাচন করার
অর্থ বিড়ালের কাছে
ভাজা মাছ আমানত
রাখার শামিল। জনসমর্থন না থাকা সত্ত্বেও এই সরকার একটি নির্বাচনী ম্যাকানিজমের মাধ্যমে পুনরায় ক্ষমতায় আসতে চায়। তিনি জালেম ইসলামবিদ্বেষী বর্তমান সরকারকে বর্জন করার
আহবান জানিয়ে বলেন,
আগামী ১০ম জাতীয়
সংসদ নির্বাচনের এক দফা এক দাবী-
‘দূর কর অসুন্দর, নাস্তিকমুক্ত বাংলাদেশ চাই’ এই লক্ষ্য নিয়ে
ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে
হবে।
হেফাজতে ইসলামের ঢাকা মহানগরীর আহবায়ক আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী হযরত
হাফেজ্জী হুজুরের রাজনৈতিক চিন্তাধারা ব্যাখ্যা করে বলেন, অনেকে মনে করে ধর্মের নামে
রাজনীতিই আসল দ্বীন। তারা নিঃসন্দেহে গোমরাহ। আরেক
শ্রেণী আছেন যারা
রাষ্ট্র থেকে দ্বীনকে বিচ্ছিন্ন করে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চায়। এরাও বিভ্রান্ত। আমাদের এই বিভ্রান্তি থেকে মুক্ত
করতে জাতিকে তওবার
দ্বারা আত্মশুদ্ধির জন্য হযরত হাফেজ্জী হুজুর খেলাফত আন্দোলন করে গেছেন। তিনি খেলাফত আলা মিনহাজিন নবুয়্যাহ নবী আলাইহিস সালামগণের সুন্নত প্রতিষ্ঠা তথা দেশে
সত্যিকারের ইসলামী হুকুমত কায়েম করে দেশে
সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন।
মাওলানা কাসেমী বলেন, হাফেজ্জী হুজুরের আন্দোলনের লক্ষ্য ও আল্লামা শফীর
চলমান ১৩ দফা হেফাজতে ইসলামের দাবীর
লক্ষ্য এক ও অভিন্ন, জালিম শাসকের সামনে হক কথা,
নাস্তিক-মুরতাদ ও সকল অপশক্তির বিরুদ্ধে রুখে
দাড়াতে হবে। এখন সময় এসেছে ইসলামী চেতনাকে বিজয়ী করতে
কুরআন-সুন্নাহ মোতাবেক আমাদের জীবন, সমাজ
ও রাষ্ট্রকে একেবারে ঢেলে
সাজাতে হবে। তিনি আল্লামা শফীর নির্দেশে হেফাজতে ইসলাম ঘোষিত
আগামী ২৪ ডিসেম্বর শাপলা চত্তরের মহাসমাবেশকে ভরপুর কামিয়াব করার
আহবান জানিয়ে বলেন,
জিহাদের অংশ হিসেবে বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনার সাথে যেকোন মূল্যে মহাসমাবেশকে সফল করতে
হবে। তিনি চলমান
রাজনৈতিক উত্তেজনা নিরসনের বিকল্পহীন সমাধানের উল্লেখ করে বলেন, বর্তমান অবস্থায় অবাধ ও সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য
তত্তাবধায়ক সরকারের কোন বিকল্প নাই। জনগণ যাকে ইচ্ছা তাকে
ভোট দিক। এটাই সবার কাম্য।
মাওলানা মুহাম্মাদ জাফরুল্লাহ খান বাংলাদেশের ইসলামী রাজনীতির প্রথিকৃত হিসাবে হযরত
হাফেজ্জী হুজুর ও তার সংগঠন বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন সম্পর্কে বলেন, “বাতিলের মোকাবেলায় যত মুজাহিদ ও জিহাদী প্রতিষ্ঠান তথা ইসলামী সংগঠন রয়েছে তার প্রায় সবই খেলাফত আন্দোলনের প্রডাকশন। আল্লাহর আইন দেশে প্রতিষ্ঠা করার প্রচেষ্টা ঈমানের দাবী। ক্ষমতায় থাকা সত্ত্বেও যারা আল্লাহর আইন প্রতিষ্ঠা করে না কুরআনের আলোকে তারা
জালিম। তিনি বলেন,
ক্ষমতাধর ফেরআউন-নমরুদরা আজ কোথায়? তিনি
বলেন, এক লক্ষ
পঁয়ষট্টি হাজার বুলেট
ছুড়ে কত জন মানুষকে শহীদ করা যায় তার পরিসংখ্যান যারা গুলি করেছে
তাদেরই জানা। ইসলাম জিন্দা হোতা হ্যায়
হার কারবালা কি বাদ। শাপলা চত্ত্বরের শাহাদাতের বিনিময়ে অচিরেই বাংলাদেশ থেকে নাস্তিক-মুরতাদের দৌরাত্ম্য ও অধর্মভিত্তিক, ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতি বিদায়
হবে।
মাওলানা জুনায়েদ আল-হাবীব
বলেন, দেশবাসী জেগে
উঠেছে আল্লামা শফীর
হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা দাবী বাস্তবায়ন হতেই হবে। তিনি ২৪ ডিসেম্বর শাপলা চত্তরে আহুত মহাসমাবেশকে সফল করার জন্য
খেলাফত নেতৃবৃন্দের প্রতি জোর আহবান জানান।
সভাপতির বক্তব্যে মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী বলেন,
মহাজোট সরকার আল্লাহ ও রাসূল সা. এর দুশমন নাস্তিকদের গডফাদার। এই সরকারের আশ্রয়ে-প্রশ্রয়ে তারা আল্লাহ ও তার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি কটুক্তি করে চলছে। এর প্রতিবাদ করার অপরাধে (?) শাপলা চত্বরে আলেম-ওলামা
ও তাওহিদী জনতার
উপর জঘন্য গণহত্যা চালিয়েছে। এই সরকারেরও আল্লাহর উপর আস্থা-বিশ্বাস নেই। তাই তারা তিন যুগ ৩৬ বছর সংবিধানে বহাল থাকা সর্বশক্তিমান আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা
ও বিশ্বাসকে সংবিধানের প্রস্তাবনা ও মূলনীতির তিন জায়গা থেকে উৎখাত
করে তদস্থলে ধর্মনিরপেক্ষতাকে প্রতিস্থাপন করে বাংলাদেশের সংবিধানকে আল্লাহমুক্ত নাস্তিকায়ন করেছে। যাদের আল্লাহর উপর আস্থা
ও বিশ্বাস নেই তারাই নাস্তিক। দেশবাসী এই ধৃষ্ঠতাকে মেনে নিতে
পারে না। ধর্মপ্রাণ আল্লাহ প্রেমিক জনগণের দেশ বাংলাদেশে কোনো নাস্তিক সরকার থাকতে পারে
না।
মাওলানা সাখাওয়াত হোসাইন বলেন,
ওলামায়ে কেরামের মধ্যে
আজ
যারা আন্দোলন-সংগ্রাম ও সংগঠন করেন
তাদের সবার পথিকৃৎ হচ্ছেন হযরত হাফেজ্জী হুজুর। বাংলাদেশ ইসলামী চেতনা বিকাশে ইতিহাস-ঐতিহ্যে খেলাফত আন্দোলন একটি মুক্তির মঞ্চ। বর্তমান সরকার দেশ থেকে ইসলামী চেতনা
মুছে দিয়ে চিরস্থায়ীভাবে ক্ষমতায় থাকতে জনগণের ভোটাধিকার বানচাল করতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে বাতিল করেছে। দেশ একটি গৃহযুদ্ধের দিকে ধাবমান। সরকার পাতানো নির্বাচনের মাধ্যমে মতলব
হাসিল করতে চায়। এটা দেশবাসী কোনভাবেই মেনে নিবে না।
আলহাজ্ব আনিসুর রহমান জিন্নাহ বলেন, আল্লাহর জমিনে
আল্লাহর আইন কায়েম
না করা পর্যন্ত দেশ ও জাতির
মুক্তি নাই। তিনি বলেন, টুপি-দাড়িওয়ালারাই হাজার
বছর ধরে আল্লাহর আইনের ভিত্তিতে খেলাফতের শিরোনামে বিশ্ব-রাজনীতির নেতৃত্ব দিয়েছিল।
ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল হান্নান আল হাদী বলেন, একটি
দেশের উপর আরেকটি দেশের আগ্রাসনের প্রেক্ষাপট তৈরি
হয় আগ্রাসিত দেশের জাতীয় অনৈক্যের গোলযোগের প্রেক্ষাপটে। দেশের
বর্তমান রাজনৈতিক অব্স্থা বাংলাদেশের উপর ভারতের আগ্রাসনের পথ প্রস্তুত করছে।
বক্তারা বলেন, খেলাফত আন্দোলন প্রতিষ্ঠার পর হতেই
জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে যে কোনো
জাতির উপর পরিচালিত অত্যাচার অবিচার ও ইসলামের বিরোধী কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে সর্বাগ্রে প্রতিবাদে গর্জে
উঠে। রাজনৈতিক অঙ্গনে ওলামায়ে কেরামের আগমন
এবং ইসলাম বিরোধী তৎপরতার প্রতিরোধ আন্দোলনে আলেম
সমাজ ও তওহিদী জনতার ব্যাপক অংশগ্রহণ হযরত হাফেজ্জী হুজুর রহ. এরই অবদান। তিনি এই আন্দোলনে না আসলে হয়তো
বাংলাদেশে মুসলমান ও ইসলামের ইতিহাস ভিন্নভাবে লেখা হতো। দেশের চলমান নাস্তিকপন্থী কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনই সবার আগে জিহাদের অংশ হিসেবে রাজপথে প্রতিবাদ আন্দোলনে নেমেছে। দেশে সৃষ্ট অরাজকতা, অনাসৃষ্টি নিরসন অতি সহজ। জুতা আবিস্কারের মতো হেকমতের সাথে
আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে কোনো
ইনসাফগার কাউকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার
প্রধান করলে সাংবিধানিক সময়ের মধ্যেই নতুন
তফসিল ঘোষনার মাধ্যমে কাঙ্খিত অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব। একদলীয় নির্বাচন দেশের জনগণ প্রতিহত করবে।