অক্টোবর ০২, ২০১৭ ইনসাফ টোয়েন্টিফোর ডটকম
সোমবার বিকাল ৩টায় আগারগাঁওস্থ নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সংলাপে বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের ১৫ সদস্য প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন দলের আমীর আল্লামা শাহ আতাউল্লাহ ইবনে হফেজ্জী হুজুর।
প্রতিনিধি দলে ছিলেন, দলের মহাসচিব মাওলানা হাবিবুল্লাহ মিয়াযী, নায়েবে আমীর আলহাজ আনিসুর রহমান জিন্নাহ, মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মীর ইদ্রীস, মোঃ রোকনুজ্জামান রোকন, মাওলানা আবু তাহের, হাজী জালাল উদ্দিন বকুল, মাওলানা সাঈদুর রহমান, মাওলানা সুলতান মহিউদ্দীন, এডভোকেট মোহাম্মাদ লিটন চৌধুরী, মাওলানা সানাউল্লাহ, মাওলানা ফিরোজ আশরাফী ও হাফেজ মাওলানা অলীউল্লাহ। নির্বচন কমিশনের পক্ষে ছিলেন, নির্বাচন কমিশনার মো: রফিকুল ইসলাম, মাহবুব তালুকদার, শাহাদাত হেসেন চৌধুরী, কবিতা খানম, সচিব হেলাল উদ্দিন আহমেদ ও আসাদুজ্জামান।
খেলাফত আন্দোলনের প্রস্তাবাবলীতে বলা হয়, সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণে জনসংখ্যা অনুপাতে ভৌগলিক দূরত্ব ও যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রতি খেয়াল রাখা। মহিলাদের সব আসনে নির্বাচনে অংশগ্রহন করার সুযোগ থাকায় সংসদে সংরক্ষিত মহিলা আসন বিলুপ্ত করা। নির্বাচনে ই ভি এম বা ডিভিএম ব্যবহার না করা। মনোনয়নপত্র দাখিলের বিধান সহজ করা, অনলাইনেও মনোনয়নপত্র দাখিলের বিধান করা। প্রার্থীর জামানত ১০ হাজার টাকার মধ্যে রাখা। ভোটার তালিকা সম্বলিত সিডি প্রার্থীকে বিনামূল্যে প্রদান করা। চলমান সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিধান করা। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত প্রার্থীর গেজেট প্রকাশ না করে ফের নির্বাচনের বিধান করা। তাহলে ৩০০ আসনের মধ্যে ১৫৩ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার পথও বন্ধ হবে।
ইসলাম বিদ্বেষী, কালোটাকার মালিক, অবৈধ সম্পদকে বৈধকারী এবং ঋণখেলাপীদের সাথে জড়িত পরিবারবর্গকে নির্বাচনের অযোগ্য ঘোষণা করা। তারা নির্বাচিত হলেও কমিশন কর্তৃক সদস্যপদ বাতিলের আইন করা।
রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন শর্তাবলী শিথিল করা, সকল কমিটিতে ৩৩% মহিলা সদস্য রাখার বাধ্যতামূলক ধারাটি বাতিল করা, কোরআন-সুন্নাহর সাথে সাংঘর্ষিক কোন শর্ত আরোপ না করা।
নির্বাচনে ব্যয়ের বৈধ সীমা ক্রমাগত বেড়ে চলায় সৎ যোগ্য আদর্শবান সাধারন নাগরিকগণ সংসদ সদস্য হওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। নির্বাচনী ব্যয় ২৫ লাখ টাকা থেকে কমিয়ে ১০ লাখ টাকার মধ্যে আনা।
সবার জন্যে সমান সুযোগ তথা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে সব রাজনৈতিক দলের সমান সুযোগ সৃষ্টি করা। ভোট ক্রয়-বিক্রয় এবং কালো টাকা ও পেশী শক্তির ব্যবহার বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা। প্রার্থী ও ভোটারদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। প্রবাসীদের জন্য ভোটাধিকার প্রয়োগের সুব্যবস্থা রাখা। ভোট কেন্দ্র সিসিটিভির আওতায় আনা, নির্বাচনী কার্যক্রমে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কোন দলীয় লোকদের মেহমানদারী গ্রহনের ব্যপারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা । ভোটের আগের দিন প্রতিটি কেন্দ্রে সেনাবাহিনীসহ পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েন করা। বাংলাদেশে কোনো দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের প্রমান নেই। অতএব একটি অবাধ সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য সংবিধান সংশোধন করে হলেও র্নিদলীয় নিরপেক্ষ ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পূর্ণবহাল করা।
খেলাফত প্রধান আল্লামা আতাউল্লাহ বলেন, নির্বাচন পদ্ধতি যত উন্নত ও নিখুঁত হবে, নির্বাচনের সুষ্ঠুতা ও নিরপেক্ষতা তত প্রশ্নহীন হবে, ফলে আস্থা ও বিশ্বাস সুদৃঢ় হবে এবং দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা সৃষ্টি হবে।
তিনি বলেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির একটি বিতর্কিত ও অগ্রহণযোগ্য নির্বাচনের কারণে দেশে রাজনৈতিক সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। একতরফা এ নির্বাচনে সুস্থ গণতান্ত্রিক রাজনীতি যেমন বিপন্ন হয়ে পড়েছে তেমনি আর্ন্তজাতিকভাবেও বাংলাদেশের ভাবমর্যাদার অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের নতজানু নীতির ফলে মানুষের ভোটের অধিকার ভূলণ্ঠিত হয়েছে। চলমান রাজনৈতিক সংকট উত্তরণে দেশে একটি জনপ্রতিনিধিত্বশীল ও জবাবাদিহীমূলক সরকার ও কার্যকর সংসদ প্রতিষ্ঠা অত্যন্ত জরুরী।
একই সাথে নির্বাচন কমিশনের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধার তথা নির্বাচনী ব্যবস্থা ও নির্বাচন কমিশনের প্রতি জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনাও একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এ জন্যে সকল দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধিত্বশীল সরকার প্রতিষ্ঠার বিকল্প নেই। এজন্য নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষ ও বলিষ্ঠ ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের ৩৮ দফা প্রস্তাবাবলি একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সহায়ক হবে এবং বিতর্কিত নির্বাচনের অবসান ঘটবে।