২৫শে জুন ২০১৩ রোজ মঙ্গলবার হেফাজতে ইসলাম
বাংলাদেশের কেন্দ্রীয়, চট্টগ্রাম উত্তর, দক্ষিণ ও মহানগরের এক যৌথ জরুরি সভায় সভাপতির বক্তব্যে হযরত আল্লামা শফী
বলেছেনঃ
* পার্বত্য চট্টগ্রামকে দেশের মূলভূখন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন করে খ্রিস্টান
রাজ্যে পরিনত করার ষড়যন্ত্র চলছে। দেশবাসীকে রাষ্ট্রঘাতী এই চক্রান্ত প্রতিহত করতে
হবে।
*বর্তমান ইসলামবিদ্বেষী অপশক্তির চেয়ে বৃহৎ শক্তি বৃটিশ ঔপনিবেশিক শক্তিকে
ওলামায়ে কেরাম উপমহাদেশ থেকে বিতাড়িত করেছে। তাদের দোসরদের বিরুদ্ধে লড়াইয়েও আমরা
বিজয়ী হবো ইনশাআল্লাহ।
*চারিদিকে হাজারো অপপ্রচার, মিথ্যা ও
ভিত্তিহীন বক্তব্য, নেতাকর্মীদের নামে
নানান অপবাদ সত্ত্বেও হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের সকল নেতাকর্মী ঐক্যবদ্ধ রয়েছেন। আমরা আল্লাহ ও তার রাসূলের (সা.) সম্মান
রক্ষার্থে খানকাহ্ ও কুরআন-হাদিসের দরসগাহ ছেড়ে রাজপথে নেমেছি। কোনো হুমকি, নির্যাতন, মামলা, হয়রানি ও ষড়যন্ত্র আমাদেরকে ঈমান রক্ষার আন্দোলন থেকে
বিরত রাখতে পারবে না। দেশের যেকোনো স্থানে যেকোনো সময় ইসলামবিদ্বেষী শক্তি
মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে এদেশের নবীপ্রেমিক আলেম-ওলামা ও তাওহীদি জনতা জীবনবাজি রেখে
তাদের দাঁতভাঙা জবাব দিতে প্রস্তুত রয়েছে।
*বাংলাদেশের হাজার হাজার কওমী মাদরাসা সরকারের এক টাকাও আর্থিক সহায়তা ছাড়া
ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের সহযোগিতায় যুগযুগ ধরে সমাজে শিক্ষার আলো বিস্তার ও আদর্শ
নাগরিক তৈরির খেদমত করে যাচ্ছে। কওমী মাদরাসাগুলো আছে বলেই এদেশে এখনও মুসলমানিত্ব
আছে। মুসলমানদের লক্ষ লক্ষ সন্তান এসব প্রতিষ্ঠানে লেখা-পড়া করে দেশ-বিদেশ ইসলামের
প্রচার-প্রসারে ছড়িয়ে পড়ছে। যারা পবিত্র জাতীয় সংসদে শহীদদের রক্ত নিয়ে উপহাস করে
তারা প্রকৃতপক্ষে ফেরআউন ও আবু জাহলের উত্তরসূরি।
*আজ কারো জানমাল, ইজ্জত-আব্রু অন্যের
কাছে নিরাপদ নয়। পরস্পরের রক্তপাত ও জীবনহানি ঘটিয়ে হলেও নিজের স্বার্থসিদ্ধি ও
ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার অশুভ প্রবণতা সর্বত্র বিরাজ করছে। এ অবস্থার পরিবর্তন ঘটানোর
জন্য আসন্ন পবিত্র মাহে রমজানে যাবতীয় অন্যায় ও পাপাচার থেকে মুক্ত থেকে তাকওয়া
অর্জনের মাধ্যমে আমাদের ঈমানী শক্তিকে বৃদ্ধি করতে হবে। মানুষ যখন তাকওয়াবান হবে
কোনো দুর্নীতি ও অন্যায় তাকে স্পর্শ করতে পারবে না। সমাজে শান্তি ও স্থিতিশীলতা
ফিরে আসবে।
আল্লামা শাহ
আহমদ শফী নিম্নোক্ত কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
১. পবিত্র মাহে রমজানের পর জ্বিলকদ
মাসের প্রথম সপ্তাহে সারাদেশে ওলামা-পীর-মাশায়েখ ও হেফাজতে ইসলামের জেলা-মহানগর
কমিটির নেতৃবৃন্দকে নিয়ে জাতীয় ওলামা-মাশায়েখ সম্মেলন।
২. ১৩ দফা দাবি বাস্তবায়নের জন্য
প্রতিটি জেলা-উপজেলা, গ্রামে-গঞ্জে
আলোচনা-সভা, সেমিনার ও দোয়া মাহফিল আয়োজন করা।
৩. আগামী ২০ শে রমজান এ'তেকাফের পূর্বে প্রত্যেক শাখায়/ইউনিটে ইফতার মাহফিল
আয়োজন করে জনসচেতনতা সৃষ্টি করা।
৪. যেসব মহানগর ও জেলা-উপজেলায়
কমিটি গঠিত হয়নি, সেখানে কমিটি গঠন করা
এবং পূর্বগঠিত কমিটিসমূহের তালিকা হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় কার্যালয় দারুল উলূম
হাটহাজারীর মাসিক মুঈনুল ইসলাম কার্যালয়ের ঠিকানায় প্রেরণ করার জন্য দায়িত্বশীলদের
প্রতি নির্দেশ দেয়া হয়।
সভায় হেফাজতে ইসলাম ঘোষিত ১৩ দফার সমর্থনে সভা, সেমিনার, গণসংযোগসহ মাসব্যাপী কর্মসূচিও ঘোষণা করা হয়। জরুরি সভায় সারাদেশে নাস্তিক্যবাদবিরোধী চলমান গণআন্দোলনে হেফাজতে ইসলামের তৎপরতা, ৫ মে ঢাকা অবরোধ ও শাপলা চত্বরের মহাসমাবেশে যৌথ বাহিনীর বর্বরোচিত গণহত্যা, শোহাদায়ে কেরাম, হেফাজতের মহাসচিব আল্লামা জুনাইদ বাবুনগরীসহ আহত নেতাকর্মীদের সুচিকিৎসা, সারা দেশে নেতাকর্মীদের নামে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা ও ভবিষ্যত কর্মসূচি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়। হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমীর আল্লামা শাহ আহমদ শফীর উদ্বোধনী বক্তব্যের মাধ্যমে সভার কার্যক্রম আরম্ভ হয়।
দারুল উলূম হাটহাজারী মিলনায়তনে আমীরে হেফাজত আল্লামা শাহ্ আহমদ শফীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন
সিনিয়র নায়েবে আমীর আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী, নায়েবে আমীর আল্লামা আবদুল মালেক হালিম, আল্লামা হাফেজ শামসুল আলম, আল্লামা মুহাম্মদ ইদরিস,
আল্লামা সালাহুদ্দিন নানুপুরী, মুফতি জসিমুদ্দিন, মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী, মাওলানা ইলিয়াস উসমানী, মাওলানা হাবিবুল্লাহ আজাদীবাজার,
মাওলানা আনাস মাদানী, মাওলানা মুফতি হারুন ইজহার, মাওলানা আবদুল জব্বার,
মাওলানা নুরুল ইসলাম নানুপুর, মাওলানা ইসহাক রাঙ্গুনিয়া, মাওলানা নাছির উদ্দিন মুনির, মাওলানা মীর মুহাম্মদ ইদরিস, আমীরের একান্ত সচিব মাওলানা শফিউল আলম, মাওলানা মুফতি আবদুল ওয়াহহাব, মাওলানা জাকারিয়া নোমান ফয়জী,
মাওলানা মুহাম্মদ সোহাইল, হাফেজ মুহাম্মদ ফয়সাল প্রমুখ।