Powered By Blogger

Wednesday, June 26, 2013

২৫শে জুন ২০১৩ রোজ মঙ্গলবার হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের সভায় সভাপতির বক্তব্যে হযরত আল্লামা শফী



৫শে জুন ২০১৩ রোজ মঙ্গলবার হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয়, চট্টগ্রাম উত্তর, দক্ষিণ ও মহানগরের এক যৌথ জরুরি সভায় সভাপতির বক্তব্যে  হযরত আল্লামা শফী বলেছেনঃ

* পার্বত্য চট্টগ্রামকে দেশের মূলভূখন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন করে খ্রিস্টান রাজ্যে পরিনত করার ষড়যন্ত্র চলছে। দেশবাসীকে রাষ্ট্রঘাতী এই চক্রান্ত প্রতিহত করতে হবে।

*বর্তমান ইসলামবিদ্বেষী অপশক্তির চেয়ে বৃহৎ শক্তি বৃটিশ ঔপনিবেশিক শক্তিকে ওলামায়ে কেরাম উপমহাদেশ থেকে বিতাড়িত করেছে। তাদের দোসরদের বিরুদ্ধে লড়াইয়েও আমরা বিজয়ী হবো ইনশাআল্লাহ।

*চারিদিকে হাজারো অপপ্রচার, মিথ্যা ও ভিত্তিহীন বক্তব্য, নেতাকর্মীদের নামে নানান অপবাদ সত্ত্বেও হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের সকল নেতাকর্মী ঐক্যবদ্ধ রয়েছেন।  আমরা আল্লাহ ও তার রাসূলের (সা.) সম্মান রক্ষার্থে খানকাহ্ ও কুরআন-হাদিসের দরসগাহ ছেড়ে রাজপথে নেমেছি। কোনো হুমকি, নির্যাতন, মামলা, হয়রানি ও ষড়যন্ত্র আমাদেরকে ঈমান রক্ষার আন্দোলন থেকে বিরত রাখতে পারবে না। দেশের যেকোনো স্থানে যেকোনো সময় ইসলামবিদ্বেষী শক্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে এদেশের নবীপ্রেমিক আলেম-ওলামা ও তাওহীদি জনতা জীবনবাজি রেখে তাদের দাঁতভাঙা জবাব দিতে প্রস্তুত রয়েছে।

*বাংলাদেশের হাজার হাজার কওমী মাদরাসা সরকারের এক টাকাও আর্থিক সহায়তা ছাড়া ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের সহযোগিতায় যুগযুগ ধরে সমাজে শিক্ষার আলো বিস্তার ও আদর্শ নাগরিক তৈরির খেদমত করে যাচ্ছে। কওমী মাদরাসাগুলো আছে বলেই এদেশে এখনও মুসলমানিত্ব আছে। মুসলমানদের লক্ষ লক্ষ সন্তান এসব প্রতিষ্ঠানে লেখা-পড়া করে দেশ-বিদেশ ইসলামের প্রচার-প্রসারে ছড়িয়ে পড়ছে। যারা পবিত্র জাতীয় সংসদে শহীদদের রক্ত নিয়ে উপহাস করে তারা প্রকৃতপক্ষে ফেরআউন ও আবু জাহলের উত্তরসূরি।

*আজ কারো জানমাল, ইজ্জত-আব্রু অন্যের কাছে নিরাপদ নয়। পরস্পরের রক্তপাত ও জীবনহানি ঘটিয়ে হলেও নিজের স্বার্থসিদ্ধি ও ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার অশুভ প্রবণতা সর্বত্র বিরাজ করছে। এ অবস্থার পরিবর্তন ঘটানোর জন্য আসন্ন পবিত্র মাহে রমজানে যাবতীয় অন্যায় ও পাপাচার থেকে মুক্ত থেকে তাকওয়া অর্জনের মাধ্যমে আমাদের ঈমানী শক্তিকে বৃদ্ধি করতে হবে। মানুষ যখন তাকওয়াবান হবে কোনো দুর্নীতি ও অন্যায় তাকে স্পর্শ করতে পারবে না। সমাজে শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে।

 আল্লামা শাহ আহমদ শফী নিম্নোক্ত কর্মসূচি ঘোষণা করেন।

 ১. পবিত্র মাহে রমজানের পর জ্বিলকদ মাসের প্রথম সপ্তাহে সারাদেশে ওলামা-পীর-মাশায়েখ ও হেফাজতে ইসলামের জেলা-মহানগর কমিটির নেতৃবৃন্দকে নিয়ে জাতীয় ওলামা-মাশায়েখ সম্মেলন।

 ২. ১৩ দফা দাবি বাস্তবায়নের জন্য প্রতিটি জেলা-উপজেলা, গ্রামে-গঞ্জে আলোচনা-সভা, সেমিনার ও দোয়া মাহফিল আয়োজন করা।

 ৩. আগামী ২০ শে রমজান এ'তেকাফের পূর্বে প্রত্যেক শাখায়/ইউনিটে ইফতার মাহফিল আয়োজন করে জনসচেতনতা সৃষ্টি করা।

 ৪. যেসব মহানগর ও জেলা-উপজেলায় কমিটি গঠিত হয়নি, সেখানে কমিটি গঠন করা এবং পূর্বগঠিত কমিটিসমূহের তালিকা হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় কার্যালয় দারুল উলূম হাটহাজারীর মাসিক মুঈনুল ইসলাম কার্যালয়ের ঠিকানায় প্রেরণ করার জন্য দায়িত্বশীলদের প্রতি নির্দেশ দেয়া হয়।

সভায় হেফাজতে ইসলাম ঘোষিত ১৩ দফার সমর্থনে সভা, সেমিনার, গণসংযোগসহ মাসব্যাপী কর্মসূচিও ঘোষণা করা হয় জরুরি সভায় সারাদেশে নাস্তিক্যবাদবিরোধী চলমান গণআন্দোলনে হেফাজতে ইসলামের তৎপরতা, মে ঢাকা অবরোধ শাপলা চত্বরের মহাসমাবেশে যৌথ বাহিনীর বর্বরোচিত গণহত্যা, শোহাদায়ে কেরাম, হেফাজতের মহাসচিব আল্লামা জুনাইদ বাবুনগরীসহ আহত নেতাকর্মীদের সুচিকিৎসা, সারা দেশে নেতাকর্মীদের নামে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা ভবিষ্যত কর্মসূচি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয় হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমীর আল্লামা শাহ আহমদ শফীর উদ্বোধনী বক্তব্যের মাধ্যমে সভার কার্যক্রম আরম্ভ হয়

 দারুল উলূম হাটহাজারী মিলনায়তনে আমীরে হেফাজত আল্লামা শাহ্ আহমদ শফীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন
সিনিয়র নায়েবে আমীর আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী, নায়েবে আমীর আল্লামা আবদুল মালেক হালিম, আল্লামা হাফেজ শামসুল আলম, আল্লামা মুহাম্মদ ইদরিস,
আল্লামা সালাহুদ্দিন নানুপুরী, মুফতি জসিমুদ্দিন, মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী, মাওলানা ইলিয়াস উসমানী, মাওলানা হাবিবুল্লাহ আজাদীবাজার,
মাওলানা আনাস মাদানী, মাওলানা মুফতি হারুন ইজহার, মাওলানা আবদুল জব্বার,
মাওলানা নুরুল ইসলাম নানুপুর, মাওলানা ইসহাক রাঙ্গুনিয়া, মাওলানা নাছির উদ্দিন মুনির,  মাওলানা মীর মুহাম্মদ ইদরিস, আমীরের একান্ত সচিব মাওলানা শফিউল আলম, মাওলানা মুফতি আবদুল ওয়াহহাব, মাওলানা জাকারিয়া নোমান ফয়জী,
মাওলানা মুহাম্মদ সোহাইল, হাফেজ মুহাম্মদ ফয়সাল প্রমুখ

Friday, June 21, 2013

৫ মে শাপলা চত্বরের ঘটনার ব্যাপারে সংসদে প্রদত্ত বক্তব্য প্রত্যাহার করে নেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আল্লামা শাহ আহমদ শফীর আহ্বান

বৃহস্পতিবার, ২০ Jun ২০১৩।

*কোনো রকমের তদন্ত ছাড়াই প্রধানমন্ত্রীর আসনে বসে তিনি কিভাবে দেশের আলেম-ওলামার ওপর ইতিহাসের একটি বর্বরোচিত কলঙ্কজনক ঘটনার ব্যাপারে এভাবে ডাহা অসত্য কথা বলতে পারলেন! -আল্লামা শফী    

*প্রধানমন্ত্রী দেশের ধর্মপ্রাণ মানুষ আলেম-ওলামাদের রক্ত নিয়ে উপহাস করেছেন -আল্লামা শফী

*প্রধানমন্ত্রী শহীদদের লাশ নিয়েও উপহাস করেছেন-আল্লামা শফী

*৫ মে রাতে শাপলা চত্বরে কী ঘটনা সরকার ঘটিয়েছে সেটা দেশের মানুষ এবং বিশ্ববাসীর কাছে অনেকটাই পরিষ্কার সেখানে অবস্থানকারী এবং জীবন নিয়ে ফিরে আসা আলেম-ওলামা ঘটনার সাক্ষী-আল্লামা শফী

*৫ মে রাতে শাপলা চত্বরে ঘুমন্ত জিকিররত আলেম-ওলামার ওপর হাজার হাজার পুলিশ-র‍্যাব-বিজিবি কে দিয়ে রাস্তার বাতি নিভিয়ে হামলা করে অসংখ্য মানুষকে হত্যা করা হয়েছে, সময় আহত হয়েছেন হাজার হাজার মানুষ
  

হাটহাজারী (চট্টগ্রাম) সংবাদদাতা, দৈনিক নয়াদিগন্ত।
  
হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির এবং দারুল উলুম হাটহাজারী মাদরাসার মহাপরিচালক আল্লামা শাহ আহমদ শফী বলেছেন,  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বুধবার জাতীয় সংসদে দেয়া বক্তব্যে রাজধানীর মতিঝিল শাপলা চত্বরে মে দিবাগত রাতে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে কোনো গোলাগুলির ঘটনা ঘটেনি, হেফাজতের কর্মীরা গায়ে রঙ মেখে রাস্তায় পড়েছিল এবং পুলিশ টান দেয়ার পর লাশ দৌড় মারলো” ইত্যাদি যেসব মন্তব্য করেছেন তা পুরোপুরি অসত্য, বিভ্রান্তিকর এবং জাতির জন্য অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক
  
প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের তীব্র নিন্দা প্রতিবাদ জানিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে হেফাজত আমির বলেন, দেশের সর্বোচ্চ দায়িত্বশীল ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রীর মুখ থেকে এমন দায়িত্বহীন মন্তব্যে আমি বিস্মিত, হতবাক  তার মন্তব্যে ক্ষোভ প্রতিবাদ জানানোর ভাষাও আমি হারিয়ে ফেলেছি

কোনো রকমের তদন্ত ছাড়াই প্রধানমন্ত্রীর আসনে বসে তিনি কিভাবে দেশের আলেম-ওলামার ওপর ইতিহাসের একটি বর্বরোচিত কলঙ্কজনক ঘটনার ব্যাপারে এভাবে ডাহা অসত্য কথা বলতে পারলেন!

তিনি বলেন, ঘটনার এক দিন পরই যেখানে পত্রপত্রিকায় অসংখ্য আহত-নিহত ব্যক্তির ছবি এসেছে, আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে পুলিশ নির্বিচারে গুলি করে মানুষ মারার ভিডিও চিত্র প্রচারিত হয়েছে এবং অসংখ্য ভিডিও চিত্র এখনো সংরক্ষিত আছে, সেখানে তিনি কিভাবে একটি সম্পূর্ণ সত্য ঘটনাকে অস্বীকার করতে পারলেন!  

শুধু তাই নয়, তিনি শহীদদের লাশ নিয়েও উপহাস করেছেন তিনিহেফাজতের কর্মীরা রঙ মেখে পড়েছিল”,  লাশ পাখির মতো উড়ে গেল” ইত্যাদি বিদ্রƒপাত্মক মন্তব্যও করেছেন আশপাশের কোনো ভবনে গুলির চিহ্ন নেই দাবি করে তিনি বলেছেন, সে দিন কোনো গোলাগুলির ঘটনাই ঘটেনি ধরনের হালকা কথা দেশের দুই-দুইবারের একজন প্রধানমন্ত্রীর মুখে মোটেও শোভা পায় না  প্রকারান্তরে তিনি দেশের ধর্মপ্রাণ মানুষ আলেম-ওলামাদের রক্ত নিয়ে উপহাস করেছেন

আল্লামা শাহ আহমদ শফী বলেন, মে রাতে শাপলা চত্বরে কী ঘটনা সরকার ঘটিয়েছে সেটা দেশের মানুষ এবং বিশ্ববাসীর কাছে অনেকটাই পরিষ্কার সেখানে অবস্থানকারী এবং জীবন নিয়ে ফিরে আসা আলেম-ওলামা ঘটনার সাক্ষী ঘটনার বিবরণ এসেছে আন্তর্জাতিক টিভি চ্যানেল আলজাজিরা এবং বিভিন্ন পত্রিকায় দেশীয় সংবাদমাধ্যমেও কিছুটা এসেছে ছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক, ইন্টারনেট, ব্লগে ঘটনার ধারণ করা ছবি ভিডিও প্রকাশ করা হয়েছে এতে পরিষ্কার, সে দিন শাপলা চত্বরে ঘুমন্ত জিকিররত আলেম-ওলামার ওপর হাজার হাজার পুলিশ-র‍্যাব-বিজিবি কে দিয়ে রাস্তার বাতি নিভিয়ে হামলা করে অসংখ্য মানুষকে হত্যা করা হয়েছে, সময় আহত হয়েছেন হাজার হাজার মানুষ অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে চালানো হামলার সাথে সাথেই আহত-নিহতদের ঘটনাস্থল থেকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে এবং রাস্তা পরিষ্কার করা হয়েছে  ঘটনাস্থলে মিডিয়া ছিল বলে যে কথা সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তা- অসত্য  মিডিয়াকে অনেক দূরে রাখা হয়েছিল এবং ঘটনা শেষ হয়ে যাওয়ার পর শেষের দিকে ঘটনাস্থলে প্রবেশ করতে দিয়েছিল  তারপরও মিডিয়া ঘটনার অনেক বীভৎস চিত্র ধারণ করতে সক্ষম হয়; কিন্তু সরকারের বাধার কারণে মিডিয়া সেগুলো পুরোপুরি প্রকাশ করতে পারেনি ওই রাতেই দিগন্ত ইসলামিক টেলিভিশন বন্ধ করে দেয়ার ঘটনাই সেটা প্রমাণ করে

তিনি বলেন, ঘটনার পরদিন থেকে হেফাজতের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে হেফাজতকে দমিয়ে রাখার চেষ্টা শুরু করে সরকার হেফাজতের মহাসচিব আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীসহ নেতাদের গ্রেফতার করে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে আল্লামা বাবুনগরীকে মারাত্মক অসুস্থ করে হাসপাতালে ভর্তি করে সম্প্রতি মুক্তি দেয়া হয় তিনি এখনো হাসপাতালের বিছানায় কাতরাচ্ছেন মাদরাসার ছাত্র-শিক্ষকদের ওপর নানা হুমকি-ধমকি, আহত-নিহতদের পরিবারকে ভয়ভীতি দেখিয়ে দমিয়ে রাখার চেষ্টা অব্যাহত আছে অনেক পরিবারকে হেফাজত নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা করার জন্য চাপ দেয়া হয় ফলে আহত-নিহতদের ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহ করা দুরূহ হয়ে পড়ে ধরনের ঘটনায় আহত-নিহতদের সঠিক সংখ্যা কখনো জানা যায় নাÑ এমন কথা দেশীয় আন্তর্জাতিক মিডিয়ার খবরেও বলা হয়েছে

তিনি বলেন, ঘটনার পর হেফাজতকে কটাক্ষ করে কথা বলেছেন, সরকারের মন্ত্রী-এমপিরা দফতরবিহীন মন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত চরম উসকানিমূলক মন্তব্য করেছেন, ‘সুবহানাল্লাহ সুবহানাল্লাহ বলতে বলতে হেফাজতের কর্মীরা পালিয়ে গেছে ওই দিন হেফাজতে ইসলাম তাণ্ডব চালিয়েছে বলে সরকারি তরফে বিভিন্নভাবে প্রচার করা হচ্ছে হেফাজতের বিরুদ্ধে কুরআন শরীফ পোড়ানোর অভিযোগ করা হচ্ছে সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রী বললেন রঙ মেখে লাশের ভান করে হেফাজতকর্মীরা রাস্তায় পড়ে থেকে নাটক করেছে সরকারের ধরনের আচরণ থেকেই অনুমান করা যায়, আসলে সে দিন কী ঘটেছিল

তিনি বলেন, ঘটনায় নিহত হওয়ার সংখ্যা যাই হোক, ঘটনাটি গণহত্যা এবং বাংলাদেশের ইতিহাসে সরকারি বাহিনী নাগরিকদের ওপর এমন হত্যাকাণ্ড চালানোর ঘটনা ইতঃপূর্বে আর ঘটেনি এই ঘটনাকে৭১ সালে পাক হানাদার বাহিনীর গণহত্যার সাথে তুলনা করা যায়

তিনি বলেন, হেফাজতে ইসলাম শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থে ব্যাপক রক্তপাত হতাহতের ঘটনায় দেশ এবং জাতির বৃহত্তর স্বার্থ চিন্তা করে ঘটনার পর অত্যন্ত দায়িত্বশীল আচরণ করে হরতাল আহ্বান করেও তা প্রত্যাহার করে নেয় এখনো আমরা বড় কোনো আন্দোলন কর্মসূচি দেইনি ধর্মপ্রাণ মানুষ ধৈর্য ধারণ করছে আমরা আল্লাহর দরবারে দোয়া-মুনাজাতের মধ্যেই আমাদের কর্মসূচি সীমাবদ্ধ রেখেছি আল্লাহ তায়ালার কাছে বিচারের ভার অর্পণ করি

আল্লামা শফী বলেন, যে ইসলামকে বুকে ধারণ করে, কুরআন রাসূলের ইজ্জতকে রক্ষার জন্য আমরা ১৩ দফা আন্দোলনে নামি, সেই ঈমানি আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে কুরআন পোড়ানোর মতো অপবাদ দিতেও এই সরকারের মন্ত্রী-এমপিরা একটুও দ্বিধা করেনি যারা কুরআনের সম্মান রক্ষায় জীবন দিতে পারে, তারা কুরআন পোড়াবেÑ এমন কথা দেশের ঈমানদার একটি মানুষের কাছেও বিশ্বাসযোগ্য হবে না

তিনি বলেন, ঘটনার পর আমরা বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠনের দাবি জানিয়েছিলাম কিন্তু সরকার দেড় মাস পরও কোনো তদন্ত কমিটি গঠন করেনি প্রকৃত তথ্য প্রকাশ হয়ে যাওয়ার ভয়ে সরকার তদন্ত কমিটি গঠন থেকে বিরত রয়েছে বলে আমরা মনে করি

তিনি বলেন, এত দিন চুপ করে থাকার পর হঠাৎ করে প্রধানমন্ত্রী কেন মের ঘটনার ব্যাপারে এভাবে অসত্য তথ্য দিলেন, ঘটনাকে আড়াল করার চেষ্টা করলেন এবং সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানোর অভিযোগ করলেন, তা সবাই বুঝতে পারছে আমরা আগেই সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলাম, প্রকৃত ঘটনা প্রকাশ করে, ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে আহত নিহতদের ক্ষতিপূরণ দিয়ে, ঘটনার জন্য দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করা এবং হেফাজতের ১৩ দফা দাবি মেনে নেয়ার জন্য কিন্তু সরকার সে পথে না গিয়ে হেফাজতকে দমিয়ে রাখা এবং প্রকৃত ঘটনা আড়াল করার পথ বেছে নিয়েছে এটা যে বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জন্য ক্ষতিকর হবে, তা আমরা হুঁশিয়ার করেছি শাপলা চত্বরের ঘটনা দেশের আগামী দিনের প্রতিটি ঘটনার ওপর গভীর প্রভাব ফেলবে বলেও হেফাজতের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে সেটার প্রতিফলন ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে তিনি বলেন, পরিস্থিতি কোনপর্যায়ে গেলে দেশের মানুষ সরকারের কথায় বিশ্বাস করতে পারে না; সেটা সবার বোঝা উচিত

আল্লামা শাহ আহমদ শফী মে শাপলা চত্বরের ঘটনার ব্যাপারে সংসদে প্রদত্ত বক্তব্য প্রত্যাহার করে নেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, মের ঘটনার ব্যাপারে প্রশাসনে আপনার আশপাশের লোকেরা হয়তো আপনাকে বিভ্রান্ত করেছে আপনাকে সঠিক তথ্য দেয়নি আপনি প্রকৃত ঘটনা না জেনেই হয়তো এমন মন্তব্য করেছেন আপনি দেশের একটি ঐহিত্যবাহী রাজনৈতিক দলের প্রধান দেশের দুইবারের প্রধানমন্ত্রী আপনি কোনো কথা বলার আগে ভালোভাবে জেনে-বুঝে বলবেনÑ এমনটিই কাম্য আপনার কথাকে কেউ মিথ্যা আখ্যায়িত করাটা আপনার অবস্থান পদ-পদবির সাথে একেবারেই বেমানান


আল্লামা শাহ আহমদ শফী দেরিতে হলেও একটি বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করে ঘটনার জন্য দায়ীদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর জন্য আবারো প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানান একই সাথে সংবিধানে আল্লাহ আল্লাহর ওপর আস্থা এবং বিশ্বাসের নীতি পুনঃস্থাপন, মহানবীর অবমানকারীদের মৃত্যুদণ্ডের বিধান করে আইন পাস, নাস্তিক ব্লগারদের শাস্তিসহ ১৩ দফা দাবি মেনে নিয়ে ঈমানদার ধর্মপ্রাণ মানুষের ক্ষোভ কমানোর জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান